শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশ-ভারত উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এটি রূপ নিয়েছে ‘ভেরি হেভি সাইক্লোনিক স্টর্ম’ হিসেবে (ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতার মাত্রায় সাত ক্যাটাগরির মধ্যে পঞ্চম)। সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে এরই মধ্যে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এই হুঁশিয়ারি সংকেত আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিদফতর।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: মো: এনামুর রহমান জানিয়েছেন, আগামীকাল (শনিবার) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা এখন ১২০ এর উপরে, তাই এটাকে সাইক্লোন বলা যায়, এখন সতর্কতা সংকেত রয়েছে চার। ঘূর্ণিঝড় আঘাতকালে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের আশংকা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়টির গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল বা দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ। এর আগে ঘূর্ণিঝড়টির কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল। শুক্রবার সকালে সংকেত বাড়ানো হয়।
সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ অধিকাংশ এলাকায় মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করছে। কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ির বৃষ্টিও হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর ও জেটিতে দুপুর পর্যন্ত পণ্য খালাস কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও সংকেত বাড়লে নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ বন্ধ করে হবে। বন্দর সচিব ওমর ফারুক এমন তথ্যই দিয়েছেন।
বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর বলছে, ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
তবে ভারতের আবহাওয়া অফিস সকাল সাড়ে ৮টার বুলেটিনে বলেছে, তখন বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর সমুদ্রবন্দরের জন্য ১১টি এবং নদীবন্দরগুলোর জন্য চারটি সংকেত ব্যবহার করে। সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতর মানে হলো- বন্দর ঘূর্ণিঝড়কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১-৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মত তেমন বিপদজনক অবস্থা এখনো আসেনি।
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতি সত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।